বিষাক্ত সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু নুরুল হুদাকে নয়

নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আজ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা আবারও ভোট ডাকাতির যে ঘৃণ্য নজির স্থাপন করল আমি এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আজ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগাম বার্তা দেয়া হলো কি-না, সেটি জনগণ জানতে চায়।’

সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘অবশেষে আজ চট্টগ্রাম- ৮ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সাহেব নিজের কেরামতি অক্ষুণ্ন রাখতে পেরেছেন। আজও সিইসির তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম উপ-নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতির ঐকান্তিক উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে। ভোট-সন্ত্রাসকে জাতীয় জীবনে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নুরুল হুদা।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘আজও ভোট লুটের রমরমা আয়োজন সম্পন্ন করেছেন কে এম নুরুল হুদা। হুদা কমিশন ভোট ডাকাতির বৈধতা দানের সিলমোহরে পরিণত হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের শত্রুপক্ষ। তিনি গণতন্ত্রের শত্রু। তিনি বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের সঙ্গে শত্রুতামূলক আচরণ করেন। বিষাক্ত সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা যায় না। তিনি একদলীয় রাজনীতির দৃঢ় বিশ্বাসের দ্বারা অনুপ্রাণিত।’

‘নির্বাচনে ভোটের আগের দিন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি, হামলা আর ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান করা হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীর সমর্থক ও ভোটারদের প্রতিনিয়ত নিগৃহীত করা হয়েছে। প্রতিমুহূর্তে ধানের শীষের সমর্থক ও ভোটাররা হিংসার সম্মুক্ষীণ হয়েছেন। সারা আসনজুড়ে সর্বত্রই অত্যাচারের চিত্র ছিল একই রকম। ১৭০টির মধ্যে সকাল বেলায় ১২০টি ভোটকেন্দ্র থেকে এবং সকাল ১১টার মধ্যে সবকটি কেন্দ্র দখল করে বিএনপিপ্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। বহিরাগতদের ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটের লাইন দেখানো হলেও ওই এলাকার কোনো ভোটারই ভোট দিতে পারেননি।’

রিজভীর অভিযোগ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, যুবদলনেতা খোরশেদ ও রফিকের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারা এখন হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এমনকি বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা ৮০ বছর বয়স্ক অ্যাডভোকেট ইসাহাকের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে তাকেও আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। এই ভোটসন্ত্রাস চলাকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এসব অপকর্মে সহায়তা করেছে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি আরও বলেন, ‘এর কয়েকদিন আগে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের এক এমপি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে একাই কীভাবে কেন্দ্র দখল করেছিল, সেটি উল্লেখ করে একইভাবে এ উপ-নির্বাচনেও তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি সব কেন্দ্র দখল করে আওয়ামীপ্রার্থীকে বিজয়ী করবেন, এ ধরণের ঘোষনা দিয়েছিলেন। এই আওয়ামী আমলে মানুষ ফেনীমার্কা নির্বাচন দেখেছে, এখন হুদামার্কা নির্বাচন দেখছে। এরপরও মানুষ আরও কী কী মার্কা নির্বাচন দেখবে সেটির প্রতীক্ষা করছে। সকল আমলের আওয়ামী সরকার ও শেখ হাসিনার ওপর গবেষণা করলে দেখা যাবে সেখানে হিংসা আর ভোটলুটের গল্প ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না। শেষ বিচারে সবচেয়ে যা বিবেচ্য তা হলো, শেখ হাসিনা ও কে এম নুরুল হুদা সমমনোভাবাপন্ন। সুতরাং তাদের নেতৃত্বে ভোটের প্রসাধনী ছাড়া সুষ্ঠু ভোট কখনোই হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সফু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply