দানের টাকায় নির্বাচন!

খরচ দিচ্ছেন শ্বশুর-শাশুড়ি মামা-খালু দুলাভাই,

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে অধিকাংশ মেয়র প্রার্থী ঋণ ও দানের টাকায় নির্বাচন করছেন। কেউ কেউ নির্বাচনী খরচ চালাতে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ  থেকে লাখ লাখ টাকা দান হিসেবে নিচ্ছেন। আবার কেউ দান নিচ্ছেন স্ত্রী, ভাই, ভগ্নিপতি ও মামা-খালুর কাছ থেকেও। অনেকেই আবার নির্বাচনী খরচের জন্য আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা কর্য করছেন। তবে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল মেয়র প্রার্থীকে অনুদান দিচ্ছে নির্বাচনী খরচের জন্য। ওই দলও সব মেয়র প্রার্থীকে নির্বাচনী খরচ দিচ্ছে না

এ ছাড়া বেশ কিছু মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী খরচ করছেন নিজস্ব আয়ের টাকা থেকে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের অর্থ প্রাপ্তি সম্ভাব্য উৎস এবং ব্যয়ের সম্ভাব্য খাতের বিবরণী’ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ইসি এখনো অনেক প্রার্থীর এই তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি। আবার ভুল করে হলফনামা প্রকাশ করেছে এই ছকে।

আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী হওয়ায় মেয়র পদে চারজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৬১টি পৌরসভায় মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী  ৩২২১ জন। আগামী ১৬ জানুয়ারি এ ধাপের ভোট গ্রহণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে মেয়র পদে ২১৪ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৩৪ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২৭৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকার সাভার পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আবদুল গনি। তিনি নির্বাচনে ব্যবসার আয় থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। আর ছেলের কাছ থেকে দান হিসেবে ২ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচনে ব্যয় করবেন। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. রেফাত উল্লাহ। তিনি ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করবেন।

এ পৌরসভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মোশারফ হোসেন। তিনি নির্বাচনে ব্যবসার আয় থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন। এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে তিনি ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নেবেন ৮০ হাজার টাকা এবং একজনের কাছে দান হিসেবে নেবেন ৮০ হাজার টাকা। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ফরহাদ হোসেন ধলু।

তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন ব্যবসার আয় থেকে ৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া ভাইয়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম। তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩৩৭ টাকা। এই ব্যয় তিনি বেসরকারি চাকরির আয় থেকে মেটাবেন। জাপা প্রার্থী আবদুর রহমান মিয়া।

তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন ৩ লাখ টাকা। এই ব্যয় তিনি সম্মানি ভাতা হিসেবে প্রাপ্ত আয় থেকে মেটাবেন। গাইবান্ধা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি নির্বাচনে নিজস্ব আয় থেকে ২ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে এক ভাইয়ের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ধার নেবেন এবং অপর এক ভাইয়ের কাছে ১ লাখ টাকা দান হিসেবে নিয়ে নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামান শহীদ। তিনি ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনে ২ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। এ ছাড়াও নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে এক চাচাতো ভাইয়ের কাছে ১ লাখ টাকা ধার নেবেন। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনিছুর রহমান। তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন ৪ লাখ টাকা।

এই ব্যয় তিনি কৃষি ও বাড়ি ভাড়ার আয় থেকে মেটাবেন। এই পৌরসভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ফরহাদ আহমেদ মমতাজী। তিনি ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনে ৮০ হাজার টাকা খরচ করবেন। এ ছাড়া নির্বাচনী খরচ মেটাতে মামার কাছে ধার নেবেন ১ লাখ টাকা। পিতার কাছ থেকে দান হিসেবে নেবেন ২০ হাজার টাকা। অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ধার হিসেবে নেবেন ৩০ হাজার টাকা এবং নির্বাচনী খরচের জন্য তার দল অনুদান হিসেবে তাকে ৩০ হাজার টাকা দেবে। দিনাজপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রাশেদ পারভেজ। তিনি ব্যবসা, কৃষি ও অন্যান্য খাতের আয় থেকে নির্বাচনে ব্যয় করবেন ২ লাখ টাকা।

নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য শাশুড়ির কাছ থেকে ধার নেবেন ১ লাখ টাকা। ভগ্নিপতির কাছ থেকে দান হিসেবে নেবেন ৫০ হাজার টাকা। অপর এক ব্যক্তির কাছ থেকে ধার হিসেবে ১ লাখ টাকা নিয়ে তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন। আরও এক ব্যক্তির কাছ থেকে নির্বাচনে ব্যয়ের জন্য তিনি দান হিসেবে ৫০ হাজার টাকা নেবেন।

এই পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি কৃষি ও ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনে ব্যয় করবেন ৩ লাখ টাকা। শ্যালকের কাছ থেকে নির্বাচনী খরচের জন্য দান হিসেবে নেবেন ১ লাখ টাকা। অপর এক ব্যক্তির কাছ থেকে নির্বাচনী খরচ মেটাতে দান হিসেবে নেবেন আরও ১ লাখ টাকা। নওগাঁর নজিরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের রেজাউল কবির চৌধুরী। তিনি নির্বাচনে ২ লাখ টাকা ব্যয় করবেন।

এই ব্যয় তিনি মেটাবেন নিজের ব্যবসা এবং স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে। এ ছাড়াও তিনি এক ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নেবেন ৫০ হাজার, অপর এক ভাইয়ের কাছ থেকে দান হিসেবে নেবেন ৫০ হাজার, অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ধার নেবেন ৫০ হাজার এবং আরও এক ব্যক্তির কাছ থেকে দান হিসেবে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নির্বাচনে খরচ করবেন। নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য আরও একজন তাকে ২০ হাজার টাকা দেবেন। এই পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন।

তিনি কৃষি ও ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনে ২ লাখ টাকা খরচ করবেন। কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. পারভেজ মিয়া। এই প্রার্থী নির্বাচনে খরচ করবেন সম্মানি ভাতার আয় থেকে ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া নির্বাচনে খরচের জন্য পিতার কাছ থেকে দান হিসেবে নেবেন ২ লাখ টাকা। এই পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. ইসরাইল মিঞা। তিনি নির্বাচনী ব্যয় কীভাবে করবেন তা ইসি ওয়েবসাইটে দেননি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শামিমুল ইসলাম ছানা।

তিনি নির্বাচনে নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা খরচ করবেন। এই পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. শামীম রেজা। তিনি নির্বাচনে ২ লাখ টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবেন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. সামছুজ্জামান অরুণ। তিনি ব্যবসার আয় থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্বাচনে খরচ করবেন।

এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আনিসুর রহমান। তিনি ব্যবসার আয় থেকে ৮০ হাজার টাকা নির্বাচনে ব্যয় করবেন। অপর একজন ব্যক্তির কাছ থেকে দান হিসেবে ২০ হাজার টাকা নিয়ে নির্বাচনে ব্যয় করবেন। কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এনামুল হক। ব্যবসা, কৃষি ও সম্মানির আয় থেকে নির্বাচনে ব্যয় করবেন ২ লাখ টাকা। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. রহমত আলী। তিনি ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনে ২ লাখ টাকা খরচ করবেন।

Leave a Reply