রাজপথ কাপানো ছাত্রনেতা রানা আজ নিঃস্ব

অনেক পুরাতন শার্ট, টুপি পরিহিত ও আশাহীন চোখে তাকিয়ে থাকা ছবির জরাজীর্ণ এই মানুষটির নাম- মোতাহার হোসেন রানা। (সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। সাবেক সভাপতি, কবি জসিম উদ্দিন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি, মিরশ্বরাই থানা ছাত্রলীগ)। ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রথম কাতারের নেতা ছিলেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি রানার একটি ছবি ঘুরছে। রানার সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন চেয়ে নগরের কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। যাতে তিনি বলেছেন-

আমরা যখন ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করি – তখন ফেসবুক ছিল না। দৈনিক পত্রিকায় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের’ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের খবরাখবরেই জানতে পারতাম ডাকসাইটে ছাত্রনেতাদের নাম। সে রকমই একজন মোতাহার হোসেন রানা। মিরসরাই থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (মাইনুদ্দিন – ইকবালুর রাহীম)।

১৯৯০ দশকে স্বৈরাচার এরশাদেরবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রথম কাতারের নেতা ছিলেন তিনি। আমার নিজেরও স্পষ্ট মনে আছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার জ্বালাময়ী ভাষণের স্মৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে তিনি ৫ মিনিট বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। বক্তব্য শুনে নেত্রী এতো খুশি হয়েছিলেন তার নাম-ঠিকানা মঞ্চে সবার সামনে ডায়েরিতে টুকে নিয়েছিলেন।

ছবির এ উদভ্রান্ত, ভগ্ন শরীরের, দারিদ্র্যের ছাপযুক্ত এই মানুষটিই সেই মাঠ কাঁপানো সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রানা৷ গত ১৬ নভেম্বর ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল।…তারই ভিড়ে একাকী দর্শকের চেয়ারে পাবলিক হয়ে বসেছিলেন একসময়ের তুখোড় নেতা রানা ভাই। সভামঞ্চে তার হাতে গড়া কর্মী, সহযোদ্ধাদের অনেকেই থাকলেও কেউ তার খবর নেননি, কেউ বলেনি আপনি স্টেজে আসুন। দলের সুদিনে অতীতের এরকম একজন ত্যাগী নেতার পাশে কি আমরা দাঁড়াতে পারি না?…একজন রাজনৈতিক কর্মীর শেষ জীবনের এরকম করুণ পরিণতি আমাদের কারোরই কাম্য নয়।

যোবাইদুল হক রাসেল (সদস্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ) লিখেছেন, ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রথম কাতারের নেতা ছিলেন রানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সভায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে ৫ মিনিট বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। সভামঞ্চে তার বক্তব্য শুনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা খুশী হয়ে তার নাম, ঠিকানা ডায়রীতে টুকে নিয়েছিলেন সেদিন।

১৬ নভেম্বর মিরশ্বরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ছিল। উপস্থিত দর্শকের সারিতে চেয়ারে এমন অসহায় হয়ে বসেছিলেন একসময়ের মাঠ কাঁপানো সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোতাহার হোসেন রানা ভাই। কিন্তু সভামঞ্চে তারই হাতে গড়া কর্মী, সহযোদ্ধা অনেকে থাকলেও কেউ তার খবর রাখেনি।

রাজনীতিতে অর্থ-বিত্ত না থাকলে দাম নাই। টাকা-পয়সা না থাকলে টিকে থাকা যায় না। সংগ্রাম আর ত্যাগের এটাই সত্য। জয় হোক রানা ভাইয়ের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সারা বাংলার সকল মুজিব প্রেমী কর্মীদের।

Leave a Reply