ভিক্ষার চাল বিক্রি করে ‘প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা’ পেতে ইউপি সদস্যকে ঘুষ!

প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা পেতে এবং রেশন কার্ডে নাম দেয়ার জন্য ভিক্ষার চাল বিক্রি করে দুই হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব বিধবা কোহিনুর বেগম। ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শামীম গাজীর বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার বিকালে সদর উপজেলার উরবুনিয়া গ্রামের কোহিনুর বেগমসহ স্থানীয় আরও অনেকে ইউপি সদস্য মো. শামীম গাজী ও তারা বাবার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।

স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকার স্থানীয় ইউপি মেম্বার শামীম গাজী ও তার বাবা কাদের কাজী প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যসামগ্রী তালিকায় এবং রেশন কার্ডে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে আদায় করেছেন। এ নিয়ে একই এলাকার সালাম নামের এক ভুক্তভোগী বরগুনা থানায় অভিযোগ করেন।

মঙ্গলবার বিকালে অভিযোগের তদন্তে যান বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন।

এ সময় কোহিনুর বেগম তাকে অভিযোগ করে বলেন, ইউপি সদস্য শামীম গাজী ও তার বাবা কাদের গাজী প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা এবং রেশন কার্ডে নাম দেয়ার জন্য দুই হাজার টাকা দাবি করেন। পরে কোহিনুরের ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে সঞ্চিত চাল বিক্রি করে দুই হাজার টাকা শামীমকে ঘুষ দেন।

এর পরও প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তার জন্য নাম নেই কোহিনুরের। এ ঘটনা জানার পর বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার ওই ভিক্ষুককে ডেকে রেশন কার্ডে তালিকাভুক্ত করেন।

এদিকে পুলিশি অভিযানের মুখে ইউপি সদস্য শামীম গাজী ও তার বাবা পলাতক রয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকালে কোহিনুর বেগমের বাড়ি উরবুনিয়া গ্রামে গিয়ে তার ঘরের অবস্থা দেখে বোঝা গেছে দারিদ্র্যসীমার নিচে তিনি বসবাস করেন। ভাঙাচোরা টিনের জোড়াতালির কোনোরকম একটি খুপড়িতে একাই থাকেন হতদরিদ্র অসহায় বৃদ্ধ কোহিনুর বেগম। স্বামী রুস্তুম আলীর মৃত্যু হয়েছে আরও বছর তিনেক আগে।

ওই এলাকা ঘুরে ভুক্তভোগী ছাড়াও আরও একাধিক দরিদ্র অসহায় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু কোহিনুর বেগম নয়, একই এলাকার আরও অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার করে টাকা নিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য শামীম গাজী ও তার বাবা আ. কাদের গাজী।

একই গ্রামের ড্রেজার শ্রমিক আ. সালাম, দিনমজুর বশির আকন, হেলাল মিয়া, সেলিনাসহ একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বললে তারাও একই অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ওই ইউপি সদস্য শামীম গাজীকে ০১৭৩১৯৬২১১৫ নম্বরে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বরগুনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহজাহান হোসেন যুগান্তরকে জানান, হতদরিদ্র কোহিনুর বেগমের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন।

তা ছাড়া সোমবার তার কাছে একই এলাকার আবদুল সালাম নামের এক ভুক্তভোগী শামীম গাজী ও তার বাবা আ. কাদের গাজীর বিরুদ্ধে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ওই অভিযোগে তিনি আরও অনেকের নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের কাছ থেকেও ওই ইউপি সদস্য ও তার বাবা ৫০০ টাকা করে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে।

এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

Leave a Reply