শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল হতে পারে!

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ছুটি শেষে সরকারি অফিস খোলার পর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শনিবারের ছুটি বাতিল হতে পারে। এ বিষয়টি এখনও সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় না থাকলেও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

মার্চ মাসের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকবে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিও ক্রম অবনতিশীল। ছুটি আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হবে বলে বুধবার সংবাদমাধ্যমেগুলোতে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

ছুটির সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে। সরকার সবাইকে ঘরে থাকার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাধারণ ছুটি সহসাই উঠছে না বলে মনে করা হচ্ছে। আর ছুটি এবং করোনা সংক্রমণ অধ্যুষিত এলাকাগুলো ‘লকডাউন’ করার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেকটাই স্থবিরতা নেমেছে। আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিচার বিভাগও এই অচলাবস্থার বাইরে না।

জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় সীমিত আকারে খোলা রয়েছে। সরকারি কার্যক্রমও অনেকটাই থেমে আছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। কিন্তু মারাত্মক ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে ছুটি বাড়ানো ছাড়া সরকারের অন্য কোনো উপায়ও নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। আর দীর্ঘমেয়াদি ছুটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে চরম অবস্থার দিতে নিয়ে যাচ্ছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তারা মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে বেসরকারি সেক্টরের মতো সরকারকে কাজের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মনোযোগ দিকে হবে। তবেই অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আর এ জন্য সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন থেকে কমিয়ে একদিন করা যেতে পারে। এতে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে। স্থায়ীভাবে না হলেও অন্তত পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করার এই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সরকার করোনা সংক্রমণরোধে কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত। সাপ্তাহিক ছুটি একদিন কমানোর বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা আছে, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন হয়তো এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি হয়তো সবকিছু বিবেচনা করে শনিবারের ছুটি বাতিল করা কিংবা বর্তমান অবস্থাই বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

একজন কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেই এর আগেও শনিবারের ছুটি বাতিলের একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেটি অনুমোদন দেননি। কারণ এর সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনস্তত্বও জড়িত। যারা কাজ করবেন তারা এটিকে কীভাবে নিচ্ছেন, সেটিও একটি বড় বিষয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এই পরিস্থিতিতেও আমরা আমাদের কাজটা করার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে এবং সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন দিলে এমনটা (শনিবার ছুটি বাতিল) হতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও সেভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

Leave a Reply