ঘুরে দেখুন ঢাকা শহরের নিদর্শনগুলো

সেই মার্চ থেকে গৃহবন্দি অবস্থায় আছে সাধারণ মানুষ। অবসর পাওয়ার জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় গৃহবন্দি থাকার পর মানুষের এখন একটিই চাওয়া, আর চাই না অবসর। এখন একটু ঘরের বাইরে বের হয়ে দম নিতে চাই। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার একঘেঁয়েমি কাটিয়ে উঠতে অনেকেই হাওয়া বদলের জন্য ভ্রমণে বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরের আশপাশে ঘুরে বেড়ানোর মতো পাঁচটি স্থানের সন্ধান দিচ্ছি ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে। তবে একটাই কথা, করোনার ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভ্রমণ করুন। সরকার প্রদত্ত নীতিমালা মেনে চলুন। আপনার জন্য যেন অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

লালবাগের কেল্লা

ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সম্রাট আওরঙ্গজেবের সুযোগ্য পুত্র শাহজাদা আজম এ প্রাসাদ নির্মাণকাজের সূচনা করেন। ১৫ মাস বাংলায় থেকে তিনি কাজ না শেষ করেই পাড়ি জমান দিল্লিতে পিতা আওরঙ্গজেবের ডাকে। ওই সময়টাতে একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়। ১৬৮০ সালে শায়েস্তা খাঁ পুনরায় বাংলার সুবেদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের কাজ শুরু করেন। ১৬৮৪ সালে শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরীবিবির মৃত্যু হয় এখানে। সব যেন আবার থমকে যায়। পুনরায় দুর্গ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন শায়েস্তা খাঁ। তিনি মনে করেন, এ দুর্গ অপয়া। ১৬৮৪ সালে এর নির্মাণকাজ আবারও বন্ধ হয়ে যায়। লালবাগের কেল্লার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার একটি হলো পরীবিবির সমাধি। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত শায়েস্তা খাঁর কন্যা ‘ইরান দুখত রাহমাত বানু’ বা ‘পরীবিবি’।


রোজ গার্ডেন

ঢাকা শহরের টিকাটুলী এলাকায় অবস্থিত একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ওই বাড়িতেই। ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়িটি নির্মাণ করেন ব্যবসায়ী হৃষিকেশ দাস। পশ্চিমমুখী ওই দোতলা বাড়ির চারপাশ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগানে সাজিয়ে তোলেন তিনি। সেই থেকে এর নাম হয় রোজ গার্ডেন। বেহিসাবি জীবনযাপনের কারণে একপর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যান রোজ গার্ডেনের মালিক হৃষিকেশ দাস। ১৯৩৬ সালে ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভি কাজী আবদুর রশীদের কাছে এই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি। কাজী আবদুর রশীদ সেখানে গড়ে তোলেন প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি। মৌলভি কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তাঁর বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। এর সুবাদে ভবনটি ‘হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ নামে পরিচিতি পায়।

কসবাটুলি জামে মসজিদ

অতীত ঐতিহ্যের জন্য ঢাকা সমাধিক পরিচিত বিশ্বের দরবারে। আর ঠিক তেমনি এক ঐতিহ্যবাহী মসজিদ হলো শতবর্ষী কসবাটুলি জামে মসজিদ। পুরান ঢাকা, কসাইটুলী, কে পি ঘোষ রোডে এর অবস্থান। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ‘ঢাকা কোষ’ গ্রন্থ হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মসজিদটির নির্মাণকাল ১৯০৭ সাল। নির্মাণ করেন আবদুল বারি নামক জনৈক ব্যবসায়ী। এটিকে অনেকে ‘চিনির টুকরা মসজিদ’ নামেও চিনে থাকে। কারণ, মসজিদের গায়ে চিনামাটির সাদা টুকরাগুলো দেখতে চিনির দানার মতো হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদটিকে এই নামে ডাকেন। মসজিদটি তৈরিতে উজ্জ্বল রঙের চীনামাটির তৈরি মোজাইকের ব্যবহার বেশি।

নিমতলী প্রাসাদ

এশিয়াটিক সোসাইটি প্রধান কার্যালয়ে নিমতলী প্রাসাদের অবস্থান। ঢাকার মুঘল নায়েব-নাজিমদের জন্য ২৫০ বছর পূর্বে নির্মিত প্রাসাদ ভবনের মূল অংশ সংরক্ষণের অভাবে ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি অংশ বর্তমানে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। ১৭০০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা এবং পূর্ব বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি ও জীবনভিত্তিক নিদর্শন দিয়ে সজ্জিত হয়েছে। এসব নিদর্শন ঢাকার বহু বনেদি ও সংস্কৃতিবান পরিবার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিউটি বোর্ডিং

বাংলাবাজারে ১ নম্বর শ্রীশদাস লেন গলিটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস জড়িত ও বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির গুণী মানুষদের আড্ডার সেই কেন্দ্রটি। বিউটি বোর্ডিংয়ের জন্মলগ্ন থেকেই এখানে আড্ডা দিতেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চিত্রপরিচালক, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

Leave a Reply