কে হচ্ছেন ডিএমপির নতুন কমিশনার?

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের পর আছাদুজ্জামান মিয়ার চাকরির মেয়াদ আগামী ১৩ আগস্ট শেষ হচ্ছে। ওইদিন আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়ে অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে ডিএমপির পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএমপির কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। এই পদে দায়িত্ব পালনকালেই তিনি ডিআইজি থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পান। ডিএমপির ইতিহাসে তিনি দীর্ঘ সময় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ডিএমপি সূত্র জানায়, বুধবার পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিএমপি কমিশনার পদে নতুন কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। অবশ্য এরই মধ্যে ডিএমপি কমিশনার পদে অতিরিক্ত আইজিপি মর্যাদার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে।

পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তার দায়িত্বকালে পুলিশকে জনসম্পৃক্ত করতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিক সুরক্ষায় নেওয়া তার উদ্যোগগুলোও প্রশংসিত হয়। তিনি পুলিশের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ঢাকায় বিট পুলিশিং ব্যবস্থার প্রবর্তন ও পুলিশভীতি দূর করতে উঠান বৈঠকের ব্যবস্থা শুরু করেন। এ ছাড়া অনেকটা নিজের উদ্যোগেই বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) পদ্ধতির প্রচলন করেন। এর মাধ্যমে ঢাকায় ভাড়াটে ও বাড়ি মালিকদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। অপরাধ দমনে এ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

ডিএমপি কর্মকর্তারা বলছেন, আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে টানা ৯২ দিন অগ্নিসন্ত্রাস চালানো হয়, যা তিনি শক্ত হাতে দমন করেন। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ও ভ্যাট আন্দোলনের নামে নানা নাশকতাও তার নেতৃত্বে দমন করা হয়। ২০১৬ সালে গুলশানে জঙ্গি হামলার পর বিদেশিদের আস্থা ফেরাতে তিনি বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালান। এ ছাড়া জঙ্গি দমনেও শক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। নিরাপত্তার জন্য ঢাকার বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিও তিনি সিসিটিভির আওতায় নেন।

এ ছাড়া মাদকবিরোধী জোরালো অভিযানও হয় তার আমলে। এর বাইরে তিনি নিজের ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের জন্য নানা কল্যাণমূলক কাজের প্রবর্তন করেন। এ সময়ে ডিএমপির নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নও হয়।

কে হচ্ছেন ডিএমপির নতুন কমিশনার: ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে পুলিশ সদর দপ্তর এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত নতুন ডিএমপি কমিশনার নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও গুঞ্জন রয়েছে।

এর মধ্যে সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজিপি শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপির চলতি দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি শাহাব উদ্দীন কোরেশীর নাম জোর আলোচনায় রয়েছে।

এ ছাড়া এসবিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলাম এবং পুলিশ টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহারের নামও শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া ওই ছয় কর্মকর্তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তা ডিআইজি পদমর্যাদার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানকে নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে।

অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের ইউনিট হিসেবে ডিএমপি যেমন মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি স্পর্শকাতার। রাজধানীর এই ইউনিটের আইন-শৃঙ্খলার ওপর দেশের আইন-শৃঙ্খলাসহ নানা বিষয় নির্ভর করে। এ জন্য এই পদে যেমন স্বচ্ছ, চৌকস কর্মকর্তা নিয়োগ পান, তেমনি তাকে সরকারের অতি আস্থাতেও থাকতে হয়। এসব বিবেচনায় ডিএমপি কমিশনার পদে নিয়োগ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

Leave a Reply