এলাকায় গানবাজনা নিষিদ্ধ করলেন নুর হোসেনের ভাতিজা

এলাকার পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে গানবাজনা নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিটি করপোরেশনের তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। তিনি সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের ভাতিজা।

বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষে মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, একজন কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন কোনোভাবেই গানবাজনা নিষিদ্ধ করতে পারে না। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট কাউন্সিলর বাদলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।

গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) শাহজালাল বাদল কাউন্সিলর কার্যালয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের ভিডিওতে দেখা যায়, কাউন্সিলর বাদল পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিউদ্দিন মোল্লা নামে তার সহযোগীকে বলছেন বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে। তখন মহিউদ্দিন মোল্লা জানান, এ এলাকায় গানবাজনা নিষিদ্ধ। এই সমাজে যাতে আর কোনও গানবাজনা না হয়। কাউন্সিলর অফিস থেকে প্রতিটি মসজিদ ও পঞ্চায়েত কমিটি বরাবর চিঠি ইস্যু করা হবে। আগামী জুমার নামাজের বয়ানে বিষয়টি বলে দেওয়া হবে। আগামী শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেই চিঠির রেফারেন্স নিয়ে প্রতিটি বাড়িওয়ালাকে আপনারা বলে দিবেন।

এই ঘোষণার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কাউন্সিলর বাদল যে কাজটি করেছেন তা গায়ের জোরে করেছেন। তার এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এখতিয়ার নেই।

স্থানীয় সংবাদকর্মী ইমরান উল্লাহ জানান, ওই ওয়ার্ডের পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির বেশিরভাগ লোকই কাউন্সিলর বাদলের অনুগত। তাদের নিয়ে বৈঠক করে কোনও সিদ্ধান্ত সমাজের ওপর চাপিয়ে দিলেই তা মানতে হবে এটা ঠিক নয়।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ধামান সাহা জুয়েল জানান, কাউন্সিলর বাদল তার ওয়ার্ডে যে গানবাজনা নিষিদ্ধ করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাকে গ্রেফতারের দাবি করছি। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আরেকজন কাউন্সিলর বন্দর এলাকায় গানবাজনা নিষিদ্ধ করেছেন। একের পর এক কাউন্সিলর গানবাজনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলেই আরেকজন উৎসাহিত হচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে হওয়ার কারণে নামাজের সময় উচ্চশব্দে গানবাজনা করা হয় না। অসুস্থ রোগী, শিশু বা বয়োবৃদ্ধদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে সে বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। কিন্তু এলাকায় কোনও গানবাজনা করা যাবে না বলে নিষিদ্ধ করার কোনও এখতিয়ার জনপ্রতিনিধির নেই।

এ ব্যাপারে কথা বলতে শাহজালাল বাদল ও তার সহযোগী ঘোষণাদাতা মহিউদ্দিন মোল্লাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply