ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি

ফরিদপুরের নগরকান্দায় ডাকাতি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি শাহ মেহেদি ফকির (২৮) নামের এক যুবকের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অভিযুক্ত মেহেদির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরসহ অন্তত সাতটি মামলার খোঁজ মিলেছে। তিনি উপজেলার তালমা ইউনিয়নের সদরবেড়া গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে।

এদিকে নগরকান্দায় পাঁচ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মেহেদি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হচ্ছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন চলছে।

স্থানীয় দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিতে স্থানীয় নেতাদের কাছে তদবির ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মেহেদি। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি মহল তার নাম সুপারিশ করে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ বরাবর লিখিত তালিকাও পাঠিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মেহেদি ২০২০ সালে রাজনৈতিক মতবিরোধ নিয়ে তালমার মোড় রাজ্জাকের চায়ের দোকানের সামনে থেকে নগরকান্দার ঝাউডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মজনু পাটোয়ারীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় মজনু পাটোয়ারী বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় একটা হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। ওই মামলায় অন্যান্য আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। তবে মেহেদি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো বহাল রয়েছে।

২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার তিরমোহনা এলাকায় চলন্ত গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে নেতৃত্ব দেন মেহেদি ফকির। চালক বাধা দিলে তাকে কুপিয়ে জখম করে সশস্ত্র ডাকাত দল পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ৭ ডিসেম্বর ইউসুফ মোল্লা বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় একটা ডাকাতির মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩/২০। ওই মামলায় মেহেদির বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

অভিযুক্ত শাহ মেহেদি ফকিরের নামে সাত মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মামলা নং ৮/১৩, নগরকান্দা থানা; মামলা নং ১০/২০, নগরকান্দা থানা; এফআইআর নং-৫/২০, নগরকান্দা থানা; এফআইআর নং-১৭/২০, নগরকান্দা থানা; এফআইআর নং-২২/২০, নগরকান্দা থানা; এফআইআর নং-০৩/১৫, নগরকান্দা থানা এবং এফআইআর নং-৩/২০।

ডাকাতি ও হত্যাচেষ্টার মামলা ছাড়াও মেহেদি ফকিরের বিরুদ্ধে নগরকান্দা থানায় রুজু হওয়া সাত মামলার মধ্যে নাশকতা, চুরি, ছিনতাই, মারামারি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, ঘরবাড়ি ভাঙচুরের মামলা রয়েছে। নিরীহ মানুষের জমি দখল ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় এবং এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পালিয়ে ছিলেন। সম্প্রতি মেহেদি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী মজনু পাটোয়ারী ও এলাকাবাসী।

মামলার বাদী মজনু পাটোয়ারী বলেন, ‌‘গরিবের বেলায় যত আইন। আমাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আমি কি এর বিচার পাব না?’

তিনি বলেন, ‘মেহেদির বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও থানা পুলিশ তাকে ধরছে না। অথচ সে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমার বাড়িতে এসে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।’

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মনিরুজ্জামান সরদারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকা বিরোধী প্রার্থী বাবুল কাজী প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন মেহেদি। এছাড়া প্রভাব খাটিয়ে তালমা এলাকায় স্থানীয় লোকদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নগরকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরান হোসেন বলেন, ‘লাবু চৌধুরী (ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে) মেহেদি ও রোমানকে যথাক্রমে সভাপতি, সম্পাদক সুপারিশ করে একটি তালিকা জেলা ছাত্রলীগের কাছে পাঠিয়েছেন। বিতর্কের বিষয়টি আমি লাবু ভাইকে জানিয়েছি। এমনকি বিতর্কিত কাউকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি না বানানোর জন্য অনুরোধও করেছি।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো পলাতক ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা উচিত নয়। তারপরও প্রভাব দেখিয়ে সভাপতি বানানো হলে এটা হবে ছাত্রলীগের জন্য কলঙ্কজনক উদাহরণ।’

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে মেহেদির নাম সুপারিশ করার বিষয়ে জানতে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজীদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন, ‘আমরা জেলা ছাত্রলীগ লাবু চৌধুরীর কাছে একটা তালিকা চেয়েছিলাম। সে অনুযায়ী তিনি একটি তালিকা পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে কঠোর যাচাই-বাছাইও হবে। আমরা সিভিগুলো ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দিয়েছি। রিপোর্টও এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আরেকটু দেখে কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে শাহ মেহেদি ফকিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। এমনকি তার বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নগরকান্দা থানার ওসি (তদন্ত) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি প্রকাশ্যে ঘুরছে অথচ পুলিশ ধরছে না, এমনটি হওয়ার কথা নয়। যদি এমনটি হয়ে থাকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোর্সঃ www.jagonews24.com/country/news/686479

Leave a Reply